রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসির সংলাপ, কার সঙ্গে কবে বসছে

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ১৭ জুলাই এ সংলাপ শুরু হয়ে চলবে ৩১ জুলাই পর্যন্ত। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ৩১ জুলাই এবং বিএনপির সঙ্গে ২০ জুলাই বসবে ইসি। 

এ তিনটি রাজনৈতিক দল সংলাপে দুই ঘণ্টা করে সময় পাবে। বাকি রাজনৈতিক দলগুলো পাবে এক ঘণ্টা সময়। বৃহস্পতিবার থেকে দলগুলোকে সংলাপের আমন্ত্রণ পাঠানো শুরু করবে ইসি। 

বুধবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে সংলাপের এ সময়সূচি প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। 

সংবাদ সম্মেলনে ইসির সচিবের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংলাপে নির্ধারিত কোনো আলোচ্যসূচি থাকছে না। আলোচ্যসূচি উন্মুক্ত। প্রতিটি নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে থাকে। এ কমিশনও সেই ধারা অব্যাহত রাখছে।

গত কমিশনের আমলে দেখা গেছে, সংলাপে যেসব সুপারিশ এসেছিল, সেগুলো মূলত বই আকারে প্রকাশ করেই নিজেদের দায়িত্ব শেষ করেছিল ইসি। এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এবারও তেমনটি হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটা সময় হলে দেখা যাবে। 

বিএনপিকে সংলাপে আনতে বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেওয়ার কথা কমিশন ভাবছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব দলকেই চিঠি দেওয়া হবে। সব দলই ইসির কাছে সমান।

জানা গেছে, এর আগে কমিশন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) কারিগরি দিক প্রদর্শনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছিল। ওই বৈঠকে বিএনপিসহ ১১টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি। অপরদিকে আওয়ামী লীগসহ ২৮টি দল অংশ নিয়েছিল। এবার সংলাপে ইভিএমসহ জাতীয় নির্বাচনের যে কোনো বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতামত জানাতে পারবেন। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ১০ জন করে সদস্য এ সংলাপে অংশ নিতে পারবেন। 

সংলাপের সময়সূচি : সংবাদ সম্মেলনে ১১ দিনে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সংলাপের সময়সূচি প্রকাশ করা হয়। সাত দিন চারটি, তিন দিন তিনটি ও একদিন দুটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। সময়সূচি অনুযায়ী, আগামী ১৭ জুলাই (রোববার) সকাল সাড়ে দশটা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন, বেলা ১২ থেকে ১টা পর্যন্ত বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, দুপুর আড়াইটা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বাংলাদেশ কংগ্রেস ও বিকাল ৪ থেকে ৫টা পর্যন্ত বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল’র সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি। 

পরের দিন ১৮ জুলাই সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, দুপুর ১২টায় বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, দুপুর আড়াইটায় খেলাফত মজলিস ও বিকাল ৪টায় বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে সংলাপ। ১৯ জুলাই মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, দুপুর ১২টায় ইসলামিক ঐক্যজোট, আড়াইটায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস এবং ৪টায় বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল (এমএল)। ২০ জুলাই বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় গণতন্ত্রী পার্টি, দুপুর ১২টায় বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী লীগ পার্টি এবং বিকাল তিনটায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সঙ্গে বসবে ইসি। 

২১ জুলাই বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, দুপুর ১২টায় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, দুপুর আড়াইটায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ ও বিকাল ৪টায় গণফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদ দিয়ে ২৪ জুলাই রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, দুপুর ১২টায় জাতীয় পার্টি-জেপি, আড়াইটায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বিকাল চারটায় ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। ২৫ জুলাই সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, দুপুর ১২টায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, আড়াইটায় বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ ও বিকাল ৪টায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির সঙ্গে সংলাপ। 

আগামী ২৬ জুলাই মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, দুপুর ১২টায় বিকল্পধারা বাংলাদেশ, আড়াইটায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং বিকাল ৪টায় ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির সঙ্গে সংলাপ শুরু হবে। ২৭ জুলাই বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, দুপুর ১২টায় জাকের পার্টি ও আড়াইটায় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এবং ২৮ জুলাই বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় গণফোরাম, দুপুর ১২টায় বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ম্যাপ ও আড়াইটায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সংলাপ শুরু হবে। শেষ দিন ৩১ জুলাই রোববার জাতীয় পার্টি ও বিকাল ৩টায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপে বসবে ইসি। 

প্রসঙ্গত, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ধারাবাহিক সংলাপ করে আসছে। গত  ১৩ মার্চ শুরু হওয়া সংলাপে এ পর্যন্ত শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ করেছে।