জার্মানি–হাঙ্গেরি ম্যাচের আগে ‘রংধনু’ ছায়া
হাঙ্গেরির বিপক্ষে ম্যাচে নামার আগে জার্মানদের প্রস্তুতিছবি: এএফপি
হাঙ্গেরির বিপক্ষে জার্মানির ম্যাচটা অন্য রকম এক উত্তাপ ছড়াচ্ছে। ইউরো ২০২০–এর শেষ ষোলোতে যাওয়ার একটা ব্যাপার তো আছেই। ইওয়াখিম ল্যুভের শিষ্যদের পরের রাউন্ডে যেতে আজ ১ পয়েন্ট পেলেই চলবে। কিন্তু হার, তাদের বিদায় করে দেবে প্রতিযোগিতা থেকে। ২০১৮ বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নেওয়া জার্মানদের কাছে আরও একটি বড় প্রতিযোগিতায় প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নেওয়াটা রীতিমতো অচিন্তনীয়। কিন্তু ফ্রান্সের বিপক্ষে সবশেষ হাঙ্গেরি যে ফুটবল খেলেছে, তাতে কোচ ল্যুভের কপালে চিন্তার বলিরেখাটা থাকছেই।
তবে মিউনিখের আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় এ ম্যাচটা অবশ্য অন্য রকম অনুরণন সৃষ্টি করছে। রাজনৈতিক এক বিতর্ক ছায়া ফেলেছে এ ম্যাচের ওপর। হাঙ্গেরির জন্যও সেই রাজনৈতিক বিতর্কটা কিছুটা হলেও বিব্রতকর। তবে ইউরোপীয় ফুটবলের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের অনুপ্রবেশ পছন্দ করে না সর্বোচ্চ সংস্থা উয়েফা। এ ব্যাপারেও তারা চোখ রাঙিয়েছে। ঘটনাটা যেন বেশি দূর গড়াতে না পারে, সে ব্যাপারেও কঠোর মনোভাব দেখিয়েছে ইউরোপীয় ফুটবল নিয়ন্ত্রকেরা।l
বিতর্কটা ‘সমকামিতা’ নিয়ে। সম্প্রতি হাঙ্গেরি সরকার সমকামীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন চালু করেছে। ব্যাপারটি নিয়ে ইউরোপের অন্য দেশগুলোর মতো জার্মানিতেও চলছে বিতর্ক। গত ম্যাচেই জার্মান গোলকিপার ও অধিনায়ক ম্যানুয়েল নয়্যার তাঁর জার্সিতে রংধনু রঙের একটা ব্যান্ড পরেছিলেন। ‘রংধনু’ বিশ্বব্যাপী সমকামীদের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। হাঙ্গেরির ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েই নয়্যার জার্সিতে সেই ব্যান্ড ধারণ করেছিলেন।
কিন্তু উয়েফা ব্যাপারটি পছন্দ করেনি। ইউরো শুরুর আগে প্রদর্শনী ম্যাচেও নয়্যারকে একই আর্মব্যান্ড পরে মাঠে নামতে দেখা গিয়েছিল। বিষয়টি উয়েফার নজরে পড়তেই তারা নড়েচড়ে বসেছিল। জার্মান গোলকিপার কেন এ ব্যান্ড পরেছেন, সেটিও জানতে চাওয়া হয়েছিল। নয়্যার নিষিদ্ধ হওয়ার অবস্থাতেই ছিলেন। তবে জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন জাতীয় দলের গোলকিপারের পাশে দাঁড়ানোয় উয়েফা শান্ত হয়েছে। জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন উয়েফাকে জানায়, রংধনু রং কেবল সমকামীদের প্রতীকই নয়, ভালো ব্যাপার-স্যাপারেরও প্রতীক। তাই নয়্যারের রংধনু রঙের আর্মব্যান্ডে কোনো রাজনীতি নেই।
এখন রাজনৈতিক ব্যাপার চলে আসছে রংধনুতে। মিউনিখের মেয়র ঘোষণা দিয়েছিলেন, হাঙ্গেরি সরকারের সমকামীদের বিরুদ্ধে কড়া আইন চালু করায় তার প্রতিবাদ করবে মিউনিখবাসী। জার্মানি-হাঙ্গেরি ম্যাচে আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় রংধনু রঙের আলোকসজ্জা করার পরিকল্পনাও মেয়র নিয়েছিলেন। তবে উয়েফা সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ইউরো ২০২০–এর ম্যাচে রাজনৈতিক বিতর্ক ছড়ায় এমন কিছু করা যাবে না।
উয়েফা অবশ্য মিউনিখ স্টেডিয়ামে রংধনু রঙের আলোকসজ্জা করতে না দিলেও মিউনিখের অন্যান্য রাস্তায় এমন আলোকসজ্জার অনুমতি দিয়েছে। গোটা ইউরোপেই ১৯৬৯ সালে নিউইয়র্কে সমকামীদের অধিকারের দাবিতে যে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তার স্মরণে ২৮ জুন থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত ক্রিস্টোফার স্ট্রিট লিবারেশন ডে পালন করা হয়। তখন অনেক জায়গায় রংধনু রঙে সাজানো হয়। উয়েফা জানিয়ে দিয়েছে, ইউরোর আয়োজনের বাইরে এ ব্যাপারে সবকিছুই করতে পারবে আয়োজক শহর মিউনিখ।