আমেরিকার ভিসা নীতি
লিখেছেন রেদোয়ানুর রহমান
এমেরিকার ভিসা স্যাংশান যদিও একটা ভালো প্রিএম্পটিভ টুল কিন্তু এটা মো-টে-ও যথেষ্ট না। আপনারা যারা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ দেখতে চান তাদের তত্ত্বাবধায়ক/তদারকি/জাতীয় সরকারের দাবী থেকে এক চুল সরে আসা উচিত হবে না।কেন?স্যাংশানের কারণে নির্বাচনের দিনটা মোটামুটি ঠিকঠাক থাকতে পারে কিন্তু নির্বাচন মানে ১টা দিনের ১৬ ঘন্টার কার্যক্রম না – ৪/৫ মাসের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কালমিনেশন হোলো নির্বাচন। নির্বাচনের দিনটাতে স্যাংশানের ভয় একটু কাজ করতে পারে কিন্তু সেটা মোটেও যথেষ্ট না।
তিনমাস সন্ত্রাস করে ১দিন ভালো হয়ে গেলে সেটাকে সুষ্ঠু নির্বাচন বলে না।নির্বাচনের তিনদিন আগে বিএনপি প্রার্থীর সব কর্মীদের পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হবে। বিএনপি প্রার্থী কোনো জনসভা করতে পারবে না – করবে শুধু মজিবকোট। টিভি এবং নিউজপেপার মিডিয়ার কর্মীরা মজিবকোটদের পেটানোর ভয়ে রিপোর্টিং করতে পারবে না। একটার পর একটা বিএনপি প্রার্থীকে নির্বাচন কমিশন ও আদালত নির্বাচনের সাতদিন আগে জেলে ভরে দিবে।
গায়েবী মামলায় হাজার হাজার বিএনপি কর্মী জেলে যাবে। নির্বাচনের দিন উল্লাপাড়ার এসপি বলবে – এই রাস্তা দিয়ে হাটা যাবে না কারণ খবর আছে যে এখানে সন্ত্রাস “হতে পারে” । নির্বাচনের দুই দিন আগে রাট তিনটার সময় মির্জা আলমগীরকে পুলিস বাড়ী থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে।এমেরিকা কি ১০ হাজার পুলিস কর্মকর্তাকে ট্র্যাক করবে? তাছাড়া একটি শেখ মুজিবীয় নির্বাচনের জন্য পুলিসকে আলাদা করে সন্ত্রাস করার দরকার নাই – পুলিশ শুধু ছাত্রলীগকে শেখ মুজিবের মতো আচরণ করতে দিলেই বাকীটা ম্যানেজ হয়ে যাবে। এমেরিকা কি শেখ মুজিবের আদর্শ বুকে ধারণ করার জন্য ছাত্রলীগকে স্যাংশান দিবে?এই বাস্তবতায় নির্বাচনের দিনে ঠিকঠাক থাকলেও কোনো লাভ হবে না।
মনে রাখবেন যে শেখ হাসিনা চাইলেও আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন বাংলাদেশে আর সম্ভব না। কারণ বাংলাদেশে একটা পূর্ণ মাফিয়াতান্ত্রিক প্রশাসন তৈরী হয়েছে যারা তাদের চুরিচামারি জারি রাখতে চায়। এটা একটা ফাংশনাল অর্গানিজম। এই অর্গানিজমকে ডিজরাপ্ট না করে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। উল্লাপাড়ার পুলিস এসপিকে এমেরিকা স্যাংশান দিলেও তার চুরি-চামারি অব্যাহত থাকবে।
এই মাফিয়াতন্ত্রের যারা এক্টর, তাদের পক্ষে সৎ থাকাটা সম্ভব না। উল্লাপাড়ার এসপি কি একটা রামদাপন্থী মজিবকোটকে জেলে নিতে পারবে – যখন সে জানে যে শেখ হাসিনা তার প্রধানমন্ত্রী। তার ঘাড়ে কল্লা কয়টা? তার লোকাল রিয়ালিটি আর ওয়াশিংটনে যেই লোকটা বাংলাদেশ ডেস্কে বসে আছে – তার রিয়ালিটি সম্পূর্ণ আলাদা।নির্বাচন ১টা দিনের মামলা না – তিন/চার মাসের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মামলা।
আপনি নির্বাচনের দিন ধানের শীষে ছাপ্পা দিতে পারলেন – এতোটুকু মোটেও যথেষ্ট না। এই ৩ মাস লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকতে হবে। মজিবকোটরা সমাবেশ করতে পারলে বিএনপিকেও সমাবেশ করতে দিতে হবে। এবং সেই সমাবেশের খবর প্রিন্ট ও এলেক্ট্রনিক মিডিয়ার ছাপার স্বাধীনতা থাকতে হবে। প্রথম আলোতে তাসনীম খলিল ও পিনাকী ভট্টাচার্যের মতামত ছাপানোর স্বাধীনতা থাকতে হবে।আমরা যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি তারা এজন্যেই তত্ত্বাবধায়ক/তদারকি/জাতীয় সরকারের দাবী করছি। নিরপেক্ষ নির্বাচনে যদি আওয়ামী লীগ জেতে – তাদেরকে আমরা স্বাগত জানাবো। কিন্তু নির্বাচন ফ্রি এন্ড ফেয়ার হতে হবে।এমেরিকা এই দেশের মানুষের জন্য গণতন্ত্র এনে দিতে পারবে না।
কাজটা আমাদেরকেই করতে হবে। এবং এই কাজটা শুধু ভোট দিয়ে করা সম্ভব না। বাংলাদেশের মীনিংফুল পরিবর্তনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক/তদারকি/জাতীয় সরকার অপরিহার্য।মনে রাখবেন নাইজেরিয়াতেও এমেরিকা স্যাংশান দেয়ার কথা বলেছিলো এবং তারা স্যাংশান দিয়েছেও। গুড অন দেম! কিন্তু নাইজেরিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে শেখ মুজিব স্টাইলের নির্বাচন হয়েছে এইবারই। আপনি যদি এই দেশকে নিজের মনে করেন – তাহলে পার্টিসিপেট করেন।
বিএনপিকে আপনার ভোট দেয়ার দরকার নাই কিন্তু বিএনপির যে দাবী – ফ্রী এন্ড ফেয়ার এলেকশান সেইটা আপনার পক্ষে যায় কেননা আপনার একটা সম্মান আছে মানুষ হিসাবে যেটা নন-নেগোশিয়েবল। আপনার যদি ইচ্ছা হয় – শেখ হাসিনাকেই ভোট দিয়েন। কিন্তু নাগরিক হিসাবে আপনার যে সম্মান – সেইটা সওদা করেন না।পরিবর্তন সম্ভব – খুবই সম্ভব। শুধু আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে। খোদাতালা মানুষকে পরিবর্তনের ক্ষমতা দিয়েছেন – সেই ক্ষমতায় আস্থা রাখুন। আপনার নিজের ভাগ্য নিজেকে বদল করতে হবে। এমেরিকা সেটা পারবে না – আপনাকেই করতে হবে। You are the master of your own ship.পার্টিসিপেট!